সূরা আল-কাহফ (গুহা) হল কুরআনের ১৮তম সূরা, যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এতে ১১০টি আয়াত রয়েছে এবং ঈমান, পরীক্ষা এবং ঐশ্বরিক জ্ঞানের বিষয়বস্তু সম্বোধন করা হয়েছে।
একে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন যা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ভীষণ বিপদের ভয় প্রদর্শন করে এবং মুমিনদেরকে যারা সৎকর্ম সম্পাদন করে-তাদেরকে সুসংবাদ দান করে যে, তাদের জন্যে উত্তম প্রতিদান রয়েছে।
যখন যুবকরা পাহাড়ের গুহায় আশ্রয়গ্রহণ করে তখন দোআ করেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্যে আমাদের কাজ সঠিকভাবে পূর্ণ করুন।
আপনার কাছে তাদের ইতিবৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
আমি তাদের মন দৃঢ় করেছিলাম, যখন তারা উঠে দাঁড়িয়েছিল। অতঃপর তারা বললঃ আমাদের পালনকর্তা আসমান ও যমীনের পালনকর্তা আমরা কখনও তার পরিবর্তে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করব না। যদি করি, তবে তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ হবে।
এরা আমাদেরই স্ব-জাতি, এরা তাঁর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে। তারা এদের সম্পর্কে প্রকাশ্য প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, তার চাইতে অধিক গোনাহগার আর কে?
তোমরা যখন তাদের থেকে পৃথক হলে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করে তাদের থেকে, তখন তোমরা গুহায় আশ্রয়গ্রহণ কর। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ কর্মকে ফলপ্রসু করার ব্যবস্থা করবেন।
তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বামদিকে চলে যায়, অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম। আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।
তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান দিকে ও বাম দিকে। তাদের কুকুর ছিল সামনের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে। যদি তুমি উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে, তবে পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতংক গ্রস্ত হয়ে পড়তে।
আমি এমনি ভাবে তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের একজন বললঃ তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ? তাদের কেউ বললঃ একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ অবস্থান করছি। কেউ কেউ বললঃ তোমাদের পালনকর্তাই ভাল জানেন তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ। এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ শহরে প্রেরণ কর; সে যেন দেখে কোন খাদ্য পবিত্র। অতঃপর তা থেকে যেন কিছু খাদ্য নিয়ে আসে তোমাদের জন্য; সে যেন নম্রতা সহকারে যায় ও কিছুতেই যেন তোমাদের খবর কাউকে না জানায়।
এমনিভাবে আমি তাদের খবর প্রকাশ করে দিলাম, যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কেয়ামতে কোন সন্দেহ নেই। যখন তারা নিজেদের কর্তব্য বিষয়ে পরস্পর বিতর্ক করছিল, তখন তারা বললঃ তাদের উপর সৌধ নির্মাণ কর। তাদের পালনকর্তা তাদের বিষয়ে ভাল জানেন। তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল, তারা বললঃ আমরা অবশ্যই তাদের স্থানে মসজিদ নির্মান করব।
অজ্ঞাত বিষয়ে অনুমানের উপর ভিত্তি করে এখন তারা বলবেঃ তারা ছিল তিন জন; তাদের চতুর্থটি তাদের কুকুর। একথাও বলবে; তারা পাঁচ জন। তাদের ছষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর। আরও বলবেঃ তারা ছিল সাত জন। তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলুনঃ আমার পালনকর্তা তাদের সংখ্যা ভাল জানেন। তাদের খবর অল্প লোকই জানে। সাধারণ আলোচনা ছাড়া আপনি তাদের সম্পর্কে বিতর্ক করবেন না এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে তাদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ ও করবেন না।
‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ বলা ব্যতিরেকে। যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন এবং বলুনঃ আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে এর চাইতেও নিকটতম সত্যের পথ নির্দেশ করবেন।
বলুনঃ তারা কতকাল অবস্থান করেছে, তা আল্লাহই ভাল জানেন। নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে রয়েছে। তিনি কত চমৎকার দেখেন ও শোনেন। তিনি ব্যতীত তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না।
আপনার প্রতি আপনার পালনকর্তার যে, কিতাব প্রত্যাদিষ্ট করা হয়েছে, তা পাঠ করুন। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নাই। তাঁকে ব্যতীত আপনি কখনই কোন আশ্রয় স্থল পাবেন না।
আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না।
বলুনঃ সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক। আমি জালেমদের জন্যে অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী তাদের কে পরিবেষ্টন করে থাকবে। যদি তারা পানীয় প্রার্থনা করে, তবে পুঁজের ন্যায় পানীয় দেয়া হবে যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে। কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং খুবই মন্দ আশ্রয়।
তাদেরই জন্যে আছে বসবাসের জান্নাত। তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ। তাদের তথায় স্বর্ণ-কংকনে অলংকৃত করা হবে এবং তারা পাতলা ও মোটা রেশমের সবুজ কাপর পরিধান করবে এমতাবস্থায় যে, তারা সিংহাসনে সমাসীন হবে। চমৎকার প্রতিদান এবং কত উত্তম আশ্রয়।
আপনি তাদের কাছে দু ব্যক্তির উদাহরণ বর্ণনা করুন। আমি তাদের একজনকে দুটি আঙ্গুরের বাগান দিয়েছি এবং এ দু’টিকে খর্জুর বৃক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত করেছি এবং দু এর মাঝখানে করেছি শস্যক্ষেত্র।
তার সঙ্গী তাকে কথা প্রসঙ্গে বললঃ তুমি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, অতঃপর র্পূনাঙ্গ করেছেন তোমাকে মানবাকৃতিতে?
যদি তুমি আমাকে ধনে ও সন্তানে তোমার চাইতে কম দেখ, তবে যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন একথা কেন বললে না; আল্লাহ যা চান, তাই হয়। আল্লাহর দেয়া ব্যতীত কোন শক্তি নেই।
আশাকরি আমার পালকর্তা আমাকে তোমার বাগান অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর কিছু দেবেন এবং তার (তোমার বাগানের) উপর আসমান থেকে আগুন প্রেরণ করবেন। অতঃপর সকাল বেলায় তা পরিষ্কার ময়দান হয়ে যাবে।
অতঃপর তার সব ফল ধ্বংস হয়ে গেল এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল, তার জন্য সকালে হাত কচলিয়ে আক্ষেপ করতে লাগল। বাগনটি কাঠসহ পুড়ে গিয়েছিল। সে বলতে লাগলঃ হায়, আমি যদি কাউকে আমার পালনকর্তার সাথে শরীক না করতাম।
তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা করুন। তা পানির ন্যায়, যা আমি আকাশ থেকে নাযিল করি। অতঃপর এর সংমিশ্রণে শ্যামল সবুজ ভূমিজ লতা-পাতা নির্গত হয়; অতঃপর তা এমন শুস্ক চুর্ণ-বিচুর্ণ হয় যে, বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এ সবকিছুর উপর শক্তিমান।
তারা আপনার পালনকর্তার সামনে পেশ হবে সারিবদ্ধ ভাবে এবং বলা হবেঃ তোমরা আমার কাছে এসে গেছ; যেমন তোমাদেরকে প্রথম বার সৃষ্টি করেছিলাম। না, তোমরা তো বলতে যে, আমি তোমাদের জন্যে কোন প্রতিশ্রুত সময় নির্দিষ্ট করব না।
আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না।
যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ আদমকে সেজদা কর, তখন সবাই সেজদা করল ইবলীস ব্যতীত। সে ছিল জিনদের একজন। সে তার পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল। অতএব তোমরা কি আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। এটা জালেমদের জন্যে খুবই নিকৃষ্ট বদল।
নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের সৃজনকালে আমি তাদেরকে সাক্ষ্য রাখিনি এবং তাদের নিজেদের সৃজনকালেও না। এবং আমি এমনও নই যে, বিভ্রান্ত কারীদেরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করবো।
যেদিন তিনি বলবেনঃ তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে তাদেরকে ডাক। তারা তখন তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তারা এ আহবানে সাড়া দেবে না। আমি তাদের মধ্যস্থলে রেখে দেব একটি মৃত্যু গহবর।
হেদায়েত আসার পর এ প্রতীক্ষাই শুধু মানুষকে বিশ্বাস স্থাপন করতে এবং তাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বিরত রাখে যে, কখন আসবে তাদের কাছে পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি অথবা কখন আসবে তাদের কাছেআযাব সামনাসামনি।
আমি রাসূলগনকে সুসংবাদ দাতা ও ভয় প্রদর্শন কারীরূপেই প্রেরণ করি এবং কাফেররাই মিথ্যা অবলম্বনে বিতর্ক করে, তা দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার উদ্দেশে এবং তারা আমার নিদর্শনাবলীও যদ্বারা তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করা হয়, সেগুলোকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করেছে।
তার চাইতে অধিক জালেম কে, যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার পূর্ববর্তী কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়? আমি তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে দিয়েছি, যেন তা না বোঝে এবং তাদের কানে রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেন, তবে কখনই তারা সৎপথে আসবে না।
আপনার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু, যদি তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্যে পাকড়াও করেন তবে তাদের শাস্তি ত্বরাম্বিত করতেন, কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে একটি প্রতিশ্রুত সময়, যা থেকে তারা সরে যাওয়ার জায়গা পাবে না।
সে বললঃ আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন প্রস্তর খন্ডে আশ্রয় নিয়েছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শয়তানই আমাকে একথা স্মরণ রাখতে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মাছটি আশ্চর্য জনক ভাবে সমুদ্রে নিজের পথ করে নিয়েছে।
অতঃপর তারা চললেন। যখন তারা নৌকায় আরোহণ করলেন, তিনি তাতে ছিদ্র করলেন। মূসা বললেনঃ আপনি কি এর আরোহীদেরকে ডুবিয়ে দিতে চান? নিশ্চয়ই আপনি একটি ভয়ঙ্কর কাজ করলেন।
অতঃপর তারা চললেন। যখন একজন বালকের সাথে সাক্ষাত হলে তিনি তাকে হত্যা করলেন। মূসা বললেনঃ আপনি একটি নির্দোষ প্রাণ হত্যা করলেন! নিশ্চয়ই আপনি একটি জঘন্য কাজ করলেন।
অতঃপর তারা চললেন। যখন এক গ্রামবাসীর কাছে খাবার চাইলেন, তারা অতিথি গ্রহণে অস্বীকার করল। সেখানে একটি ভাঙনাধরা প্রাচীর দেখে তিনি তা মেরামত করলেন। মূসা বললেনঃ আপনি যদি চাইতেন, এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিতে পারতেন।
প্রাচীরটি ছিল নগরের দুটি এতিম বালকের। এর নীচে তাদের গুপ্তধন ছিল। তাদের পিতা ছিল সৎলোক। আপনার পালনকর্তা চাইলেন তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে নিজেরাই তাদের ধন উদ্ধার করুক। এটা আমার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নয়। এটাই সেই ঘটনার ব্যাখ্যা যা আপনি ধৈর্য্য ধারণ করতে পারেননি।
যখন তিনি সূর্যাস্তের স্থানে পৌঁছলেন, সূর্যকে এক কাদার ঝিলে অস্ত যেতে দেখলেন এবং সেখানে এক সম্প্রদায় পেলেন। আমি বললামঃ হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদের প্রতি সদয় হতে পারেন।
তিনি বললেনঃ আমার পালনকর্তা আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। তোমরা শ্রম দিয়ে আমাকে সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি মজবুত প্রাচীর নির্মাণ করব।
তিনি বললেনঃ লোহার পাত নিয়ে এস। যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ হল, তিনি বললেনঃ হাপর দিয়ে বাতাস দাও। যখন তা আগুনে পরিণত হল, বললেনঃ গলিত তামা নিয়ে এস, আমি এর উপর ঢেলে দেই।
বলুনঃ যদি সমুদ্রের পানি কালি হত আমার পালনকর্তার বাণী লেখার জন্য, তবে তা শেষ হয়ে যেত অথচ আমার পালনকর্তার বাণী শেষ হত না, এমনকি যদি আমরা আরেকটি সমুদ্র এনে দিই।
বলুনঃ আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের ইলাহ একক ইলাহ। অতএব, যে তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।
সূরা কাহফ Mp3 ডাউনলোড
সূরা কাহাফ অডিও
সূরা আল-কাহফ আরবি + বাংলা অনুবাদ অডিও
সূরা কাহফ ভিডিও
Structure of Surah Al-Kahf
চার গল্প:
গুহার সাথীরা (৯-২৬ আয়াত): নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা ঘুমন্ত ব্যক্তিরা, যাদের আল্লাহর অলৌকিক শক্তিতে রক্ষা করা হয়েছিল।
দুই ব্যক্তি এবং বাগান (৩২-৪৪ আয়াত): সম্পদ বনাম বিনয়ের একটি দৃষ্টান্ত।
মুসা (মোজেস) এবং খিদির (৬০-৮২ আয়াত): মানবিক যুক্তির বাইরে ঐশ্বরিক প্রজ্ঞা মেনে নেওয়ার একটি শিক্ষা।
জুল-কারনাইন (৮৩-৯৮ আয়াত): একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক যিনি ইয়াজুজ ও মাজুজের (গগ ও মাগগ) বিরুদ্ধে একটি বাধা নির্মাণ করেন।
সংযোগকারী বিষয়: চারটি গল্পই বিশ্বাস, সম্পদ, জ্ঞান এবং ক্ষমতার পরীক্ষার চারপাশে ঘোরে।
সূরা কাহফের গল্পের বিবরন
ক. গুহাবাসী সঙ্গীরা
প্রসঙ্গ: একদল তরুণ বিশ্বাসী (ইসলামের পূর্ববর্তী যুগে) অত্যাচার থেকে বাঁচতে পালিয়ে যায় এবং একটি গুহায় আশ্রয় নিয়ে ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে থাকে (কুরআন ১৮:২৫)।
মূল আয়াত: “যখন যুবকেরা গুহায় আশ্রয় নিল, তখন তারা বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তোমার পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন কর এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজের সঠিক পথনির্দেশ কর।’” (১৮:১০, সাহিহ ইন্টারন্যাশনাল)।
শিক্ষা: সংকটের সময় আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখা, পুনরুত্থানের প্রতি ঈমান রাখা এবং আল্লাহর সময়ের ওপর ক্ষমতার স্বীকৃতি।
খ. দুই ব্যক্তি ও বাগান
প্রসঙ্গ: একজন ধনী ব্যক্তি অহংকারের সাথে তার সম্পদের কৃতিত্ব নিজেকেই দেয়, কিন্তু তার বিনয়ী সঙ্গী তাকে আল্লাহকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পরে, তার বাগান ধ্বংস হয়ে যায় (১৮:৩২-৪৪)।
মূল আয়াত: “তার ফলসমূহ ধ্বংস করা হলো, তখন সে হাত মেলতে লাগল তার ওপর যা সে সেখানে ব্যয় করেছিল, আর তা তার ছাদসমূহের ওপর ধ্বসে পড়েছিল…” (১৮:৪২)।
শিক্ষা: পার্থিব সম্পদ অস্থায়ী; কৃতজ্ঞতা ও বিনয় অপরিহার্য।
গ. মুসা ও খাদির
প্রসঙ্গ: মুসা (আ.) খাদির (আল্লাহর একজন বিশেষ বান্দা, যিনি বিশেষ জ্ঞানপ্রাপ্ত) এর কাছে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। খাদির এমন কিছু কাজ করেন (নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত করা, এক শিশুকে হত্যা করা), যা পরে মহান কল্যাণ হিসেবে প্রতিভাত হয় (১৮:৬০-৮২)।
মূল শিক্ষা: “তুমি কীভাবে ধৈর্য ধারণ করবে এমন বিষয়ে যা তোমার জ্ঞানের বাইরে?” (১৮:৬৮)। মানুষের জ্ঞান সীমিত; আল্লাহর পরিকল্পনা সর্বোৎকৃষ্ট।
ঘ. জুলকারনাইন
প্রসঙ্গ: একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক পূর্ব ও পশ্চিমে ভ্রমণ করেন এবং নিপীড়িতদের সাহায্য করেন। তিনি গগ ও মগগ (ইয়াজুজ ও মাজুজ) দমন করতে লোহা ও তামার প্রাচীর নির্মাণ করেন, যা কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ধ্বংস হবে (১৮:৮৩-৯৮)।
মূল আয়াত: “তিনি বললেন, ‘এটি আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে দয়া। কিন্তু যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি এসে যাবে, তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন…’” (১৮:৯৮)।
শিক্ষা: ন্যায়সঙ্গত নেতৃত্ব, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ, এবং আল্লাহর চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণের প্রতি বিশ্বাস।
উপসংহার
সূরা আল-কাহফ আধুনিক যুগের চ্যালেঞ্জগুলোর বিরুদ্ধে – বস্তুবাদ, অহংকার এবং সন্দেহের মতো বিপদের বিরুদ্ধে এক অনন্তকালীন দিকনির্দেশনা হিসেবে রয়ে গেছে।
নিয়মিত অধ্যয়ন আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করে।